হোম আমাদের সম্পর্কে জেলা বিচার বিভাগের ইতিহাস
চট্টগ্রাম এর নামকরণ এবং ইতিহাস:
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড় , সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দরগুলির মধ্যে একটি, যার উপকূল টলেমির বিশ্ব মানচিত্রে আবির্ভূত হয়েছে, এটি দেশের প্রধান সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার। বন্দরটি বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর এবং দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় ব্যস্ততম বন্দর।
বৈচিত্রময়ী চট্টগ্রামের নামের কারণও বৈচিত্রে ভরা। এক মত অনুসারে ত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে বার জন আউলিয়া এসেছিলেন, তারা একটি বড় বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে উঁচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় 'চাটি' অর্থ বাতি বা চেরাগ এবং 'গাঁও' অর্থ গ্রাম। এ থেকে নাম হয় 'চাটিগাঁও'। আবার এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোন্সের মতে এ এলাকার একটি ক্ষুদ্র পাখির নাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। চট্টগ্রাম ১৬৬৬ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ হয়। আরাকানীদের হটিয়ে মুঘলরা এর নাম রাখে ইসলামাবাদ। মোগলরা এর প্রশাসনিক সীমানা চিহ্নিত করে। ১৭৬০ সালে নবাব মীর কাশিম আলী খান ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এটি হস্তান্তর করেন। ব্রিটিশরা এর নাম রাখে 'চিটাগাং'।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতঃ
সবুজে ঘেরা মৌন পাহাড় সারি, প্রাণোচ্ছল সাগরের কল্লোল ধ্বনি, কর্ণফুলী নদীর কলতান এবং শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপুল বৈভা চট্টগ্রাম। বার আউলিয়ার পূণ্য ভূমি এ চট্টগ্রাম এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পীর আউলিয়া ও সাধক পুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন। প্রাচীনকালে কর্ণফুলী নদীর মোহনা আর বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠে সভ্যতা। ঐতিহাসিক শহর চট্টগ্রামের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে হাজারো স্মৃতির ধারক ও বাহক হল আমাদের প্রিয় আদালত ভবন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই তিন আমলের গৌরবের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম আদালত ভবন। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের ইতিহাস সুদীর্ঘ প্রায় ১৩১ বছরের ইতিহাস। ১৮১২-১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত কোর্ট বিল্ডিং একটি ঔপনিবেশিক স্হাপত্য কীর্তি। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৬৬৭ সালে মোঘল শাসকগণ চট্টগ্রাম দখল করেন। এর পূর্বে চট্টগ্রাম ও এর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা পর্তুগীজ এবং মগদের দ্বারা শাসিত ছিল। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক বাহক চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং বা আদালত ভবন যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত আদিকালে সেই পাহাড়ের নাম ছিল পরীর পাহাড় বা ফেয়ারী ছিল। পর্তুগীজ আমলে পরীর পাহাড় জনৈক পর্তুগীজ ব্যবসায়ী জন হ্যারির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তখন এই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ের উপর একটি কুটির ছিল যেখানে পর্তুগীজদের একটি চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালিত হত। ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর জনৈক ইংরেজ ক্যাপ্টেন পরীর পাহাড় ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় হাত বদলের পর উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের বিশিষ্ট জাহাজ ব্যবসায়ী এবং খ্যাতনামা জমিদার অখিল চন্দ্র সেন তৎকালীন নয় হাজার টাকায় পরীর পাহাড় খরিদ করেন। ১৮৮৯ সালে জমিদার অখিল চন্দ্র সেন এর কাছ থেকে আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ব্রিটিশ সরকার পরীর পাহাড় অধিগ্রহণ করেন। ১৮৯২-১৮৯৬ সালের মধ্যে অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর লাল ভবনটি ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন ইংরেজ ও মুসলিম স্হাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে ৫,৬৫,৩৭২/- টাকা ব্যয়ে ১১৮২০২ বর্গফুট বিশাল আয়তনের এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দ্বিতল ইমারত নির্মাণ করে যা কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অনুরূপ।
ছবিঃ পুরাতন জজ কোর্ট বিল্ডিং
ভবন নির্মাণের পর পরীর পাহাড়ের নাম হয়ে যায় কোর্ট হিল বা কোর্ট বিল্ডিং। এই ভবনের দক্ষিনাংশে সিভিল কোর্ট, দোতলার পূর্বাংশে জেলা ও দায়রা জজ, অর্ধাংশে উকিলখানা, দোতলার পশ্চিমাংশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নীচ তলায় মহাফেজখানা, কমিশনার অফিস, মুন্সেফ / ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, কেরানীখানা, ল্যান্ড রিকুইজিশন, ফরেষ্ট, ট্রেজারী, তৌজিখানাসহ প্রায় সকল সরকারী দফতর এই ভবনে স্থানানর হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং হয়ে উঠে সমস্ত চট্টগ্রামের প্রশাসনিক এবং বিচারিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতঃ
১৮১২-১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত কোর্ট বিল্ডিং এর প্রায় ১২০ বছর পর সময়ের প্রয়োজনে নির্মিত হয় চট্টগ্রাম নতুন আদালত ভবন। গণপূর্ত বিভাগের অধীন ২০০৮ সালে চারতলা বিশিষ্ট ৩,৪১,৭১১ বর্গফুট বিশিষ্ট এই বিশাল ভবন নির্মিত হয়।
ছবিঃ নতুন জজ কোর্ট বিল্ডিং
ঐ ভবনটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভবন বলে জানা যায়। এ ভবনে জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়র জজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল, অর্থঋণ আদালত, পরিবেশ আদালত ও দেউলিয়া বিষয়ক আদালত রয়েছে। নতুন আদালত ভবন নির্মাণের আগে পাহাড়ের পাদদেশে এনেক্স আদালত ভবন নামে আরো একটি ভবন নির্মিত হয়েছিল।
চট্টগ্রামে বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত আছেন জনাব ড. আজিজ আহমদ ভূঞা, মাননীয় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চট্টগ্রাম।
জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম এর অধীনে চট্টগ্রাম সদরে দেউলিয়া বিষয়ক আদালতসহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০টি, অর্থঋণ ও পরিবেশ আদালতসহ যুগ্ম জেলাও দায়রা জজ আদালত ০৫টি, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ আদালত ১০টি এবং জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) এর কার্যালয় অবস্থিত। পটিয়া চৌকিতে ০১ টি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ০৩ টি সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও ০৩ টি সহকারী জজ আদালত মোট ০৭টি আদালত রয়েছে। সাতকানিয়া চৌকিতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সাতকানিয়া, সাতকানিয়া অতিঃ ও লোহাগাড়া সহকারী জজ আদালতসহ মোট ০৪টি আদালত রয়েছে। বাঁশখালী চৌকিতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বাঁশখালী, বাঁশখালী অতিঃ আদালতসহ মোট ০৩টি আদালত রয়েছে। এছাড়া রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ চৌকি প্রত্যেকটিতে ০১ টি করে আদালত রয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত:
ছবিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন।
২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর কোর্ট হিলে নির্মিত হয় সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং অধীনস্ত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাড়াও এ ভবনে রয়েছে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য দপ্তর। বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন জনাব কামরুন নাহার রুমী, মাননীয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম।
চৌকি আদালত:
বাংলাদেশের দুর্গম প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত এক ধরনের আদালতকে চৌকি আদালত (Chowki adalat) বলে। চৌকি আদালত অর্থ উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানি বা ফৌজদারি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত। চৌকি আদালতেও মামলা করার জন্য অন্যান্য আদালতের মতোই দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এই আদালতের ইতিহাস অনেক প্রাচীন ও গৌরবময়। পাক ভারত উপমহাদেশে এই আদালত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বিচার ব্যবস্থা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। বর্তমানে চৌকি আদালতকে উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বলা হয়।ব্রিটিশ আমলে এই দুই আদালত একজন মুন্সেফ ও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করতেন। সারাদেশে বর্তমানে ১৬টি জেলায় ফৌজদারি ও দেওয়ানি মিলে ৪৩টি চৌকি আদালত রয়েছে।
ছবিঃ পটিয়া চৌকি আদালত, চট্টগ্রাম।
এগুলোর মধ্যে ২৫টি হলো ফৌজদারি আদালত ও ১৮টি হলো দেওয়ানি আদালত। চৌকি আদালতগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৭টি চৌকি আদালত। ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে এই আদালতগুলো প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলো হলো, পটিয়া চৌকি আদালত, সাতকানিয়া চৌকি আদালত, বাঁশখালী চৌকি আদালত, সন্দ্বীপ চৌকি আদালত, রাউজান চৌকি আদালত, রাঙ্গুনিয়া চৌকি আদালত এবং ফটিকছড়ি চৌকি আদালত। চৌকি আদালতসমূহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি বিজ্ঞ বিচারক এবং আইনজীবীগণ বিচারপ্রার্থী মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিস
চট্টগ্রাম জেলায় একটি লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। এখানে দুস্থ দরিদ্র মানুষকে বিনা খরচে আইনী সেবা প্রদান, বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আইনী পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী আইনজীবী সমিতি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা বার মাত্র ১৭ জন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়ে ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলায় ১ম প্রতিষ্ঠিত বার ছিলো ‘আলীপুর বার এসোসিয়েশন’ এবং ‘চট্টগ্রাম জেলা বার এসোসিয়েশন’ ছিল ২য় স্থানে। বঙ্গভঙ্গের পূর্বেই চট্টগ্রাম বার অসাধারণ গৌরব ও মর্যাদা নিয়ে দন্ডায়মান ছিল। বঙ্গভঙ্গের পরেও এমন কি ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনাত্তোর বাংলদেশেও এই বারের ঐতিহ্য, মর্যাদা ও ক্ষমতা উজ্জ্বলতর । গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সংগ্রামে এর ভূমিকা অতুলনীয় । ১৯৩০ সালে বিপ্লবী সূর্যসেনের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলাও এই আদালতে পরিচালিত হয়, যেখান চট্টগ্রাম বারের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক । চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এ্যাডভোকটে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এস এম বজলুর রশিদ । বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী বারে ৫ হাজার ৩০৯ জন বিজ্ঞ আইনজীবী তালিকাভুক্ত রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। বাংলাপিডিয়া
৩। আইনজীবী ২০১৩ ( স্বরণিকা) , চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি , চট্টগ্রাম।
সংকলন
১। জনাব মোহাম্মদ খাইরুল আমীন, যুগ্ম জেলা জজ
২। জনাব শাহনেওয়াজ মনির, সিনিয়র সহকারী জজ
৩। জনাব মাহমুদুল হক, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৪। জনাব শাহরিয়ার ইকবাল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৫। জনাব নিশাত সুলতানা, সহকারী জজ
ধন্যবাদ
আমাদের কথা
চট্টগ্রাম এর নামকরণ এবং ইতিহাস:
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড় , সমুদ্রে এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে প্রাচ্যের রাণী হিসেবে বিখ্যাত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এই শহরটি অবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দরগুলির মধ্যে একটি, যার উপকূল টলেমির বিশ্ব মানচিত্রে আবির্ভূত হয়েছে, এটি দেশের প্রধান সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার। বন্দরটি বঙ্গোপসাগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর এবং দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় ব্যস্ততম বন্দর।
বৈচিত্রময়ী চট্টগ্রামের নামের কারণও বৈচিত্রে ভরা। এক মত অনুসারে ত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে বার জন আউলিয়া এসেছিলেন, তারা একটি বড় বাতি বা চেরাগ জ্বালিয়ে উঁচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় 'চাটি' অর্থ বাতি বা চেরাগ এবং 'গাঁও' অর্থ গ্রাম। এ থেকে নাম হয় 'চাটিগাঁও'। আবার এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোন্সের মতে এ এলাকার একটি ক্ষুদ্র পাখির নাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। চট্টগ্রাম ১৬৬৬ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ হয়। আরাকানীদের হটিয়ে মুঘলরা এর নাম রাখে ইসলামাবাদ। মোগলরা এর প্রশাসনিক সীমানা চিহ্নিত করে। ১৭৬০ সালে নবাব মীর কাশিম আলী খান ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এটি হস্তান্তর করেন। ব্রিটিশরা এর নাম রাখে 'চিটাগাং'।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতঃ
সবুজে ঘেরা মৌন পাহাড় সারি, প্রাণোচ্ছল সাগরের কল্লোল ধ্বনি, কর্ণফুলী নদীর কলতান এবং শত বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপুল বৈভা চট্টগ্রাম। বার আউলিয়ার পূণ্য ভূমি এ চট্টগ্রাম এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পীর আউলিয়া ও সাধক পুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন। প্রাচীনকালে কর্ণফুলী নদীর মোহনা আর বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠে সভ্যতা। ঐতিহাসিক শহর চট্টগ্রামের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে হাজারো স্মৃতির ধারক ও বাহক হল আমাদের প্রিয় আদালত ভবন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই তিন আমলের গৌরবের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম আদালত ভবন। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের ইতিহাস সুদীর্ঘ প্রায় ১৩১ বছরের ইতিহাস। ১৮১২-১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত কোর্ট বিল্ডিং একটি ঔপনিবেশিক স্হাপত্য কীর্তি। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৬৬৭ সালে মোঘল শাসকগণ চট্টগ্রাম দখল করেন। এর পূর্বে চট্টগ্রাম ও এর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা পর্তুগীজ এবং মগদের দ্বারা শাসিত ছিল। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক বাহক চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং বা আদালত ভবন যে পাহাড়ের উপর অবস্থিত আদিকালে সেই পাহাড়ের নাম ছিল পরীর পাহাড় বা ফেয়ারী ছিল। পর্তুগীজ আমলে পরীর পাহাড় জনৈক পর্তুগীজ ব্যবসায়ী জন হ্যারির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তখন এই জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ের উপর একটি কুটির ছিল যেখানে পর্তুগীজদের একটি চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালিত হত। ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর জনৈক ইংরেজ ক্যাপ্টেন পরীর পাহাড় ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় হাত বদলের পর উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের বিশিষ্ট জাহাজ ব্যবসায়ী এবং খ্যাতনামা জমিদার অখিল চন্দ্র সেন তৎকালীন নয় হাজার টাকায় পরীর পাহাড় খরিদ করেন। ১৮৮৯ সালে জমিদার অখিল চন্দ্র সেন এর কাছ থেকে আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ব্রিটিশ সরকার পরীর পাহাড় অধিগ্রহণ করেন। ১৮৯২-১৮৯৬ সালের মধ্যে অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীর লাল ভবনটি ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন ইংরেজ ও মুসলিম স্হাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে ৫,৬৫,৩৭২/- টাকা ব্যয়ে ১১৮২০২ বর্গফুট বিশাল আয়তনের এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দ্বিতল ইমারত নির্মাণ করে যা কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অনুরূপ।
ছবিঃ পুরাতন জজ কোর্ট বিল্ডিং
ভবন নির্মাণের পর পরীর পাহাড়ের নাম হয়ে যায় কোর্ট হিল বা কোর্ট বিল্ডিং। এই ভবনের দক্ষিনাংশে সিভিল কোর্ট, দোতলার পূর্বাংশে জেলা ও দায়রা জজ, অর্ধাংশে উকিলখানা, দোতলার পশ্চিমাংশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নীচ তলায় মহাফেজখানা, কমিশনার অফিস, মুন্সেফ / ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, কেরানীখানা, ল্যান্ড রিকুইজিশন, ফরেষ্ট, ট্রেজারী, তৌজিখানাসহ প্রায় সকল সরকারী দফতর এই ভবনে স্থানানর হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং হয়ে উঠে সমস্ত চট্টগ্রামের প্রশাসনিক এবং বিচারিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতঃ
১৮১২-১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত কোর্ট বিল্ডিং এর প্রায় ১২০ বছর পর সময়ের প্রয়োজনে নির্মিত হয় চট্টগ্রাম নতুন আদালত ভবন। গণপূর্ত বিভাগের অধীন ২০০৮ সালে চারতলা বিশিষ্ট ৩,৪১,৭১১ বর্গফুট বিশিষ্ট এই বিশাল ভবন নির্মিত হয়।
ছবিঃ নতুন জজ কোর্ট বিল্ডিং
ঐ ভবনটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভবন বলে জানা যায়। এ ভবনে জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়র জজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল, অর্থঋণ আদালত, পরিবেশ আদালত ও দেউলিয়া বিষয়ক আদালত রয়েছে। নতুন আদালত ভবন নির্মাণের আগে পাহাড়ের পাদদেশে এনেক্স আদালত ভবন নামে আরো একটি ভবন নির্মিত হয়েছিল।
চট্টগ্রামে বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত আছেন জনাব ড. আ আজিজ আহমদ ভূঞা, মাননীয় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চট্টগ্রাম।
জেলা জজ আদালত, চট্টগ্রাম এর অধীনে চট্টগ্রাম সদরে দেউলিয়া বিষয়ক আদালতসহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০টি, অর্থঋণ ও পরিবেশ আদালতসহ যুগ্ম জেলাও দায়রা জজ আদালত ০৫টি, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজ আদালত ১০টি এবং জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) এর কার্যালয় অবস্থিত। পটিয়া চৌকিতে ০১ টি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ০৩ টি সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও ০৩ টি সহকারী জজ আদালত মোট ০৭টি আদালত রয়েছে। সাতকানিয়া চৌকিতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সাতকানিয়া, সাতকানিয়া অতিঃ ও লোহাগাড়া সহকারী জজ আদালতসহ মোট ০৪টি আদালত রয়েছে। বাঁশখালী চৌকিতে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, বাঁশখালী, বাঁশখালী অতিঃ আদালতসহ মোট ০৩টি আদালত রয়েছে। এছাড়া রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ চৌকি প্রত্যেকটিতে ০১ টি করে আদালত রয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত:
ছবিঃ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন।
২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর কোর্ট হিলে নির্মিত হয় সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং অধীনস্ত অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাড়াও এ ভবনে রয়েছে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য দপ্তর। বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন জনাব কামরুন নাহার রুমী, মাননীয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম।
চৌকি আদালত:
বাংলাদেশের দুর্গম প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত এক ধরনের আদালতকে চৌকি আদালত (Chowki adalat) বলে। চৌকি আদালত অর্থ উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানি বা ফৌজদারি এখতিয়ারসম্পন্ন আদালত। চৌকি আদালতেও মামলা করার জন্য অন্যান্য আদালতের মতোই দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এই আদালতের ইতিহাস অনেক প্রাচীন ও গৌরবময়। পাক ভারত উপমহাদেশে এই আদালত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বিচার ব্যবস্থা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। বর্তমানে চৌকি আদালতকে উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বলা হয়।ব্রিটিশ আমলে এই দুই আদালত একজন মুন্সেফ ও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করতেন। সারাদেশে বর্তমানে ১৬টি জেলায় ফৌজদারি ও দেওয়ানি মিলে ৪৩টি চৌকি আদালত রয়েছে।
ছবিঃ পটিয়া চৌকি আদালত, চট্টগ্রাম।
এগুলোর মধ্যে ২৫টি হলো ফৌজদারি আদালত ও ১৮টি হলো দেওয়ানি আদালত। চৌকি আদালতগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৭টি চৌকি আদালত। ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে এই আদালতগুলো প্রতিষ্ঠা হয়। এগুলো হলো, পটিয়া চৌকি আদালত, সাতকানিয়া চৌকি আদালত, বাঁশখালী চৌকি আদালত, সন্দ্বীপ চৌকি আদালত, রাউজান চৌকি আদালত, রাঙ্গুনিয়া চৌকি আদালত এবং ফটিকছড়ি চৌকি আদালত। চৌকি আদালতসমূহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি বিজ্ঞ বিচারক এবং আইনজীবীগণ বিচারপ্রার্থী মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিস
চট্টগ্রাম জেলায় একটি লিগ্যাল এইড অফিস রয়েছে। এখানে দুস্থ দরিদ্র মানুষকে বিনা খরচে আইনী সেবা প্রদান, বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আইনী পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি
চট্টগ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী আইনজীবী সমিতি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা বার মাত্র ১৭ জন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়ে ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলায় ১ম প্রতিষ্ঠিত বার ছিলো ‘আলীপুর বার এসোসিয়েশন’ এবং ‘চট্টগ্রাম জেলা বার এসোসিয়েশন’ ছিল ২য় স্থানে। বঙ্গভঙ্গের পূর্বেই চট্টগ্রাম বার অসাধারণ গৌরব ও মর্যাদা নিয়ে দন্ডায়মান ছিল। বঙ্গভঙ্গের পরেও এমন কি ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনাত্তোর বাংলদেশেও এই বারের ঐতিহ্য, মর্যাদা ও ক্ষমতা উজ্জ্বলতর । গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সংগ্রামে এর ভূমিকা অতুলনীয় । ১৯৩০ সালে বিপ্লবী সূর্যসেনের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলাও এই আদালতে পরিচালিত হয়, যেখান চট্টগ্রাম বারের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক । চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এ্যাডভোকটে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এস এম বজলুর রশিদ । বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী বারে ৫ হাজার ৩০৯ জন বিজ্ঞ আইনজীবী তালিকাভুক্ত রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। বাংলাপিডিয়া
৩। আইনজীবী ২০১৩ ( স্বরণিকা) , চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি , চট্টগ্রাম।
সংকলন
১। জনাব জনাব শাহনেওয়াজ মনির, সিনিয়র সহকারী জজ
২। জনাব মাহমুদুল হক, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৩। জনাব শাহরিয়ার ইকবাল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
৪। জনাব নিশাত সুলতানা, সহকারী জজ
ধন্যবাদ